নতুন নিউজ সিরিজ ‘উৎসব-দ্রোহ-আন্দোলন’ আজ ২০ অক্টোবর, রবিবার রাত ১০ টায়।

নিউজ ডেস্ক :: যখন গোটা কলকাতা দুর্গাপুজোর উৎসবে মগ্ন, তখন শহরের অন্য এক প্রান্তে গড়ে উঠেছিল ভিন্ন এক দৃশ্য। জুনিয়র ডাক্তারদের এক প্রতিবাদমুখর দল, তাঁদের দশ দফা দাবির জন্য পথে নেমেছেন। শহরের এই প্রতিবাদ, যা পুজোর মহাসমারোহের মধ্যে ন্যায়বিচারের নিরন্তর চাহিদাকে তুলে ধরছে, উঠে আসছে বিশেষ প্রতিবেদনের আলোকে।

জুনিয়র ডাক্তারদের এই আন্দোলন শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবি নয়, এটি এক দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। প্রশাসনের উদাসীনতা এবং শাসকশ্রেণির দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধে তাঁদের এই সংগ্রাম এক নীরব কিন্তু দৃঢ় প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ধর্মতলা থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের পথে পথে, শহরের প্রতিটি কোণায় প্রতিধ্বনিত হচ্ছে তাঁদের দাবি—নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার চাই। এ এক নীরব বিদ্রোহ, যার শব্দহীন অথচ দৃঢ় পদক্ষেপের বিপরীতে রয়েছে শাসকের দমননীতি ও পুলিশি বাধা। রানী রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের সমান্তরালে, যখন শহর প্রতিমা বিসর্জনের উৎসবে মাতোয়ারা, তখন এই প্রতিবাদ যেন এক অন্যরকম “কার্নিভাল”—যেখানে মূর্ত হয় ন্যায়ের দাবি, নিরাপত্তার অধিকার, এবং একটি নতুন দিনের স্বপ্ন। পুলিশের বাধা, প্রশাসনের হুঙ্কার—কিছুই থামাতে পারেনি তাঁদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন।

এই প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দু শুধু আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ নয়। এটি চিকিৎসাক্ষেত্রে চলমান নিরাপত্তাহীনতার সংকট এবং নারী নিরাপত্তার প্রশ্নে প্রশাসনের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে এক ব্যাপক গর্জন। শহরের প্রান্তে ঘটে যাওয়া নানা অমানবিক ঘটনা—তিলোত্তমার রহস্যমৃত্যু, কুলতলির চতুর্থ শ্রেণির শিশুর উপর নির্মম নির্যাতন—প্রশ্ন তোলে আমাদের সমাজের নৈতিক অবস্থান নিয়ে। এই ঘটনা শুধু নারী নির্যাতনের প্রশ্ন নয়, এটি আমাদের সামাজিক কাঠামোর গভীর ফাটলের প্রতিফলন।

এ আন্দোলন সেই কামদুনির ধর্ষিতা মেয়েটির কথাও মনে করিয়ে দেয়, যিনি আজও ন্যায়বিচার পাননি। প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি বদলেছে বটে, কিন্তু বাস্তবে কি তা কার্যকর হয়েছে? এ প্রশ্ন এখন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বারবার ঘটে যাওয়া সহিংসতাগুলো, প্রশাসনের চরম ব্যর্থতার একের পর এক উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৪ আগস্ট ২০২৪-এ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে দুষ্কৃতীদের হামলা, ১৮ আগস্ট এসএসকেএমের ট্রমা সেন্টারে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর আক্রমণ, ৫ সেপ্টেম্বর সাগর দত্ত হাসপাতালে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি — এ যেন এক ক্রমবর্ধমান সংকট। সর্বশেষ ১৩ অক্টোবর এসএসকেএম ট্রমা সেন্টারে আরেকটি হামলা, ১৫ অক্টোবর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে রোগীর আত্মীয়দের তাণ্ডব, এমনকি সুপারের ঘরেও আক্রমণ চালানো হয়েছে।

এতকিছুর পর, জুনিয়র ডাক্তারদের একটাই প্রশ্ন—এই প্রশাসনের উপর কি আর ভরসা রাখা সম্ভব? ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি বারবার শুনতে পাওয়া গেলেও, তার বাস্তবায়ন এখনও অধরাই রয়ে গেছে। এই আন্দোলন নারীর নিরাপত্তা এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে সুরক্ষার প্রশ্নে সমানভাবে গুরুত্ব বহন করে। এ এক যুগপৎ প্রতিবাদ, যা শুধুমাত্র দুঃখ-বেদনার প্রকাশ নয়, বরং গোটা সমাজের জন্য এক কঠিন প্রশ্ন। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং প্রশাসনের দায়িত্বশীলতা কতটুকু? এ প্রশ্নের উত্তর না পেলে, এই নীরব বিদ্রোহ ক্রমে আরও বৃহত্তর প্রতিবাদে রূপ নিতে পারে। কী এই আন্দোলনের গতিপথ? কোন পথে আসতে পারে সমাধান? সব উত্তর নিয়ে আসছে TV9 বাংলার নতুন নিউজ সিরিজ ‘উৎসব-দ্রোহ-আন্দোলন’। আজ ২০ অক্টোবর, রবিবার রাত ১০ টায়।